(পরিচালক বাক্ )
Friday, November 20, 2015
সারা
পৃথিবী জুড়ে সন্ত্রাস চলছে। ধর্ম একটা অছিলা। সেই ক্রুসেডের সময় থেকেই। যিশু বলেছিলেন তিনি শান্তি
দিতে আসেননি, হাতে তরবারি নিয়ে এসেছেন, তাঁর কথাটা খুব কম লোক বুঝেছে। মহম্মদের তো হাতেই ছিল
তরবারি, অনেকে তাঁকে কল্কি অবতার মনে করেন, একজন মুসলমান আমাকে
জানিয়েছিলেন। কিন্তু মহম্মদের যুদ্ধটা খুব কম লোক বুঝেছে। হ্যাঁ, শ্রীকৃষ্ণও একজন
দুর্দ্ধর্ষ অপরাজেয় যোদ্ধাই তো ছিলেন। কিন্তু সেগুলো কোন যুদ্ধ
ছিল? সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরানোর যুদ্ধে, নাকি পৃথিবীকে প্রতাপ আর অত্যাচার থেকে ত্রাণ
দেওয়ার যুদ্ধ? কিছু যুদ্ধ শান্তির চেয়ে মূল্যবান। কিছু
যুদ্ধ শান্তি নামক কয়েনের বিপরীত পিঠ।
কিন্তু ঘটনা হল, আমাদের
বুদ্ধিজীবীরা অবস্থান খুঁজে পাচ্ছেন না। আমাদের
এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার উদাহরণ হল, তুমি যদি হিন্দু
হও গরু খেয়ে নিজের সহিষ্ণুতা দ্যাখাও, তুমি যদি মুসলিম হও,
হিন্দুদের একটু সহ্য করে নিতে শেখো, আর আমাদের
ভোট দিতে ভুলোনা।
এর বেশি কিছু আশা করা হয়না। বুদ্ধিজীবীদের
আচরণও ওটুকুই।
এর মধ্যে একটা বারুদের স্তুপ দিনে দিনে উঁচু হচ্ছে।
ধীরে ধীরে হাজার-হাজার
বছর কেটেছে, আমাদের সভ্যতা গেঁজিয়ে গেছে, হিন্দুধর্মের আচারসর্বস্বতাটুকুই তলানি হয়ে পড়ে থেকেছে। হিন্দুরা
সেটা পেয়েছেন, তাঁদের পছন্দ হচ্ছেনা, নিজেদের আনস্মার্ট মনে হচ্ছে হিন্দু হিসেবে। এরমধ্যে
সারা পৃথিবীর সন্ত্রাস।
আমাদের কনফিউজড বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারছেন না মোক্ষম কী
বলা যায়।
তাঁদের প্রোফাইল পিকে লেগে গেছে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার
রং।
আমরা প্রোফাইল পিক কালো করে দিয়ে,
বা রং বদলে ভাবি পৃথিবী বদলে দেব, এ আমাদের নিষ্পাপ
স্বপ্ন হয়ত।
ঠিক আছে।
গোমাংস
আমি প্রথম খেয়েছিলাম ২০০১ সালে। একটি শীতের রাতে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। কৌতূহল থেকেই খাওয়া। আমার খেতে ভালো লাগেনি। হয়ত ঠান্ডা খেয়েছিলাম বলেই। ওখানেই ইতি।
ব্যক্তিগত
চৌহদ্দির বাইরে ভাবা যাক?
বৈদিক যুগ থেকে মহাকাব্যের যুগ অবধি গোমাংস হিন্দুদের খাদ্য ছিল। আজ নয়। কেন? পন্ডিতরা বলবেন। আমি মনে করি, সেটার কারন গরুর
বৃহত্তর উপযোগিতা, এবং আবহাওয়া। হিন্দুর পায়ে গরুর চামড়ার
জুতো দিব্যি শোভা পায়,
কিন্তু জিভে আজ আর ওঠে না। সেটা ধার্মিক যতটা ততটাই
সাংস্কৃতিক সিদ্ধান্ত। মৌলবাদ নয়। সংস্কার,
যা থেকে সংস্কৃতি তার বৈশিষ্ট পেয়েছে, কু না সু
সেই বিচার পরের কথা। গরুর মাংসে বা শূকরের হাড়ে
কামড় দিলেই যদি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেওয়া যেত,
পৃথিবীতে শকুনগুলোই সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ। খাদ্যাভ্যাস
একটা সাংস্কৃতিক ব্যাপার।
সাংস্কৃতিক চিহ্ন হতে পারে একটি খাবার। সেটা
জোর করে লোপ করা, এবং জোর করে চাপিয়ে
দেওয়া দুটোই সমান অমানবিক। এবার কুকুর খেয়ে কি প্রমাণ
করবেন আপনি নাগাল্যান্ডকে ভালোবাসেন? আদিবাসীদের সঙ্গে
একাত্ম হতে গেলে দাঁড়াশের মাংস তাহলে একটা পথ? বিষয়টা এত সরল
হলে আমাদের দেশে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহটা হত কি?
এসব কিছুই আর কিছু নয়,
আমাদের দেশে লোকনীতি আর রাজনীতি ঘুলিয়ে গেছে, সবার
আগে ভোটের সত্যটাই বড় হয়ে উঠেছে, আর এমএলএ পদের টিকিট। ধর্মনিরপেক্ষতার
আগে ভোটারনিরপেক্ষতাটা জরুরী, সম্ভবত। এগুলো
আগুন নিয়ে খেলা হয়ে যাচ্ছে, যারা ফ্যাসিস্টের
মতো পুলিশ ডেকে গোমাংস ভক্ষণ আটকাচ্ছেন, যারা মিডিয়া ডেকে সেটা
গিলছেন, উভয়ের পক্ষেই।
অনুপম মুখোপাধ্যায়
(পরিচালক বাক্ )
(পরিচালক বাক্ )