Friday, November 20, 2015
কৃষ্ণঘন যাম
জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়
হাওয়াকল প্রকাশনী
প্রচ্ছদ- অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশকাল ২০১৫
মূল্য ১২০ টাকা
বহুকাল ধরেই বলা হচ্ছে,
ঐতিহাসিক উপন্যাসের সবচেয়ে বিচ্ছিরি ফস্কা গেরোটা হল, সেখানে না থাকে ঠিকঠাক
ইতিহাস, আর না থাকে উপন্যাস। যিনি লেখেন তিনি কনফিউজড, আর যিনি পড়েন, তিনি ইতিহাস
পাননা, আবার ডকুমেন্টেশনও না। আমাদের দেশে তবু, ঐতিহাসিক উপন্যাস একটি লোকপ্রিয়
ধারা। এই ধারায় সর্বাগ্রে যার নাম আসে, তিনি বাবু বঙ্কিম। আছেন শরদিন্দু
বন্দ্যোপাধ্যায়। সমকালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রায় স্মরণযোগ্য ইতিহাস নিয়েই ‘সেই সময়’
বা ‘প্রথম আলো’-র মতো উপন্যাস লিখেছেন, আবার প্রাগৈতিহাসিক কাল নিয়ে ‘আমিই সে’-র
মতো উপন্যাসও। এঁদের লেখালেখিতে বাঙালি মজেছে। অর্থাৎ, ঐতিহাসিক উপন্যাস বাঙালির
মেজাজের সঙ্গে ভালো যায়, কারন সে তার কল্পনার খোরাক পায়, এবং যে জিনিসটার অভাব
আমরা মনঃস্তাত্ত্বিকভাবেই অনুভব করি- ইতিহাস, সেটার জন্য তার মনকেমন ভাব জেগে ওঠে।
জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় আমাদের সমকালীন বন্ধুদের মধ্যে খুবই
গুরুত্বের জায়গায় আছেন, কাজ করছেন। একাধিক ওয়েব এবং প্রিন্ট পত্রিকায় তাঁর
উপস্থিতি আমরা দেখতে পাই। আমরা জানি, তিনি কবি, তিনি সমকাল নিয়ে চিন্তিত ও ক্রুদ্ধ,
কিছু ব্যাপারে তাঁর জোরালো মতামত আছে, যেটা আজকাল অনেকেরই নেই। জয়দীপ লিখেছেন একটি
ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘কৃষ্ণঘন যাম’। আমি একটু অবাক হয়েছি। তারপরেই বুঝতে পেরেছি এই যুবকটি
শুধু সমসময়ে আবদ্ধ নন। বাঙালির ফেলে আস আসা সময়ের প্রতি তাঁর তীব্র আসক্তি রয়েছে।
আমি তাঁকে নিজের আত্মীয় ভেবেছি।
‘কৃষ্ণঘন যাম’ একটি থ্রিলার। এর পটভূমিকা হল মল্লরাজাদের বিষ্ণুপুর।
রয়েছে ষড়যন্ত্র। বর্ধমান রাজাদের সঙ্গে মল্লরাজাদের সংঘাত ও টানাপোড়েন তথ্যগত
মান্যতা এবং সজীবতা বজায় রেখে উপস্থিত হয়েছে কাহিনির মধ্যে। মুর্শিদাবাদের নবাবের
রাজনৈতিক প্রতাপ এবং তাঁর মানবিক চেহারা। রয়েছে বর্গীহানার জীবন্ত পটভূমি।
সেইসঙ্গেই মল্লরাজাদের শাক্ত থেকে ধীরে ধীরে বৈষ্ণব হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া। কিছু
চরিত্র প্রায় জ্যান্ত, কিছু চরিত্র হয়ত আরেকটু স্পষ্ট হতে পারত। ভাস্কর পন্ডিত স্বয়ং
আরো বিস্তৃতি পেতে পারতেন। ক্যানভাস অনেক বড় হওয়ার কারনেই কিছু ছবি হালকা একটু অতৃপ্তি
রেখে যায়। কিন্তু সব মিলিয়ে উপন্যাসটি আমাদের অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে, যেটা অনেক
বাজারচলতি উপন্যাস আজকাল পারছেনা।
জয়দীপের উপন্যাসটিকে সফল বলা যায়। ভাষাগতভাবে তিনি সুনীল
গঙ্গোপাধ্যায়ের ঈষৎ কাছাকাছি, আবার প্লট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেন শরদিন্দুকে।
এ ব্যাপারে জয়দীপের পছন্দগুলো তাঁর নান্দনিক বোধের পরিচয় দেয়, তাঁর আনুগত্যের নয়।
একটা ক্ল্যাসিক আবহ এবং আকাঙ্ক্ষা আগাগোড়াই টের পাওয়া যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে
উপন্যাসটির জন্য জয়দীপকে আলাদা ধন্যবাদ দেব, কারন বিষ্ণুপুর আমার খুবই প্রিয় একটি
স্থান। লেখক আমার প্রিয় একটি শহরকে আমার বুকশেলফে জায়গা করে দিলেন।
আলোচনা-
অনুপম মুখোপাধ্যায়
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment