Friday, November 20, 2015
১)
আমার খবর হাওয়ায় ভাসে ! শুনে দিল খুশ এবং চাঙ্গা হওয়ার কথা। হচ্ছে না । কারন আমার
দীর্ঘ দীর্ঘকালীন ব্যস্ততা এবং ব্যক্তিগত সময়ের অভাবের কারনগুলি একেবারেই
ব্যাক্তিগত এবং নির্মম এবং কষ্টের । তো , এর বেশি নয় । বাক-এর পাঠকের মূল্যবান
সময় আমার ব্যক্তিগত অন্ধকারে হারাক , এ আমি চাইতেই পারি না
২) নতুন কবিতার সেরা সম্পদ আপনি। শুরু করেছিলেন সেই
আশির দশক থেকে। কীভাবে নতুন কবিতার সাথে জড়ালেন? নতুন কবিতার সম্বন্ধে আপনার ভাবনা
কী?
২) এত বড় প্রশংসায় তো অ্যাত্তো বড় করে খুশি
হওয়ার কথা তুষ্টি । সবিনয়ে বলি , এ বোঝা আমার নামাও বন্ধু নামাও । কারন, কবিতার
ধারামুক্তি ( নতুন কবিতা )-র কাজে যারা যত যোগদান দিয়েছেন আজ তক , প্রত্যেকেই নিজের মত করে , একান্ত স্বতন্ত্র
উচ্চারনে নিজের সেরা প্রয়াস ও সৃষ্টিটিই দিয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন । প্রত্যেকেই তাঁর
অবস্থানে সেরা সম্পদ । তবে এভাবে আমার কর্মকাণ্ডকে ভেবেছ বলে কৃতজ্ঞ ।
আসলে শুরুটা আমার খুব কাঁচা বয়সে , গত শতকের সাতের দশকের গোড়ায় । তারপর বিচ্ছিনতা ।
মাঝে আবার কিছু চেস্টা এবং আবার হারিয়ে যাওয়া । তারপর ১৯৮৪-৮৫ সাল নাগাদ অকাল্
প্রয়াত কবিবন্ধু বিদ্যুৎ সেনগুপ্ত এবং আমার গুরুপ্রতিম প্রয়াত কবি উত্তর বসু যদি
আমাকে টেনে না আনতেন আর আমার লেখালিখি হত কিনা সন্দেহ । পাগল বিদ্যুৎ তো আমার সাথে
আলাপ করেছিল স্রেফ একটা মিথ্যে কথা বলে । একই অফিস বাড়ির বিভিন্ন তলায় সেই সাতটা
মাসের জন্য সারা জীবন আমার মন কেমন করবে ।
তো এভাবে শুরু করে প্রথমে উত্তরদার সম্পাদনায় ঋকবৈদিক
পত্রিকার কাজকর্ম । এই করতে করতে একদিন চির সঙ্কোচময় আমাকে কবি ধীমান চক্রবর্তী
নিজে থেকেই আলাপ করে তাঁর সম্পাদিত '
আলাপ '-এর জন্য কয়েকটি কবিতা চেয়ে নেন। খুব
আনন্দের এই ঋণ আমার, ধীমানের কাছে । ইতিমধ্যেই শ্রী বারীন
ঘোষালের সাথে আমার পত্র যোগাযোগ গড়ে ওঠে আবার । আবার , কারন
খুব ছোট বয়স থেকেই ওনারা আমায় স্নেহ দিয়েছেন । ওই বয়সেই বারীন দা আমাকে চিঠি
লিখেছেন , কবিতা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন এবং পরামর্শ বেশি আমল
না দেওয়ার কথাও লিখেছেন । হাঃ হাঃ । আমার লক্ষ ছিল , নিজের মত লেখা , অন্য কিছু লেখা , শুরু থেকেই । খ্যাতি পরিচিতি পেতে বেশ ভালই ইচ্ছে হ'ত
কিন্তু একান্ত নিজের মত লেখার ইচ্ছেটা ছাড়তাম না কখনও । এখন হল কি , ১৯৯১ সালে এক ভালোরকম বাদল রাত্রে আমরা পুরো কবিতা ক্যাম্পাস পার্টি
নামলাম টাটানগর স্টেশনে । তারপর বারীনদা , বারীনদার গাড়ি এবং
শেষে বারীনদার বাড়ি । বলে নেওয়া ভালো , যে , ইতিমধ্যে কবিতা ক্যাম্পাস পত্রিকা শুরু হয়ে গেছে । কয়েক সংখ্যার পর
ভালবেসে আমাকেও জুড়ে নেওয়া হয়েছিল । এই কবিতা ক্যাম্পাস পার্টি আর বারীন ঘোষালের
পাল্লায় পড়ে আমার যে পরিমান সংস্কার হোল তা বলে শেষ বলে শেষ করার নয়। আমি কৃতজ্ঞ ।
কৃতজ্ঞ আমি কমলদা ( চক্রবর্তী ) , শঙ্কর( লাহিড়ী ) , এবং কিছু পরে পাওয়া প্রয়াত স্বদেশদার( সেন ) কাছে । এখন সে সময় আমরা সবাই
নিজের মত আলাদা করে কবিতার নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে ঘাম দিচ্ছিলাম । ওদিকে বারীন
দা তাঁর প্রতিকবিতার পর্যায়টি ( মায়াবী সীমুম ) পার করে তারপর নিজের সর্বস্ব বাজি রেখে
কবিতার নতুন পথ তৈরিতে ডুবে ছিলেন । তো বারীন দা আমাদের ঘর গুছিয়ে দিলেন । শুরু
হয়ে গেল নতুন কবিতা । জুড়ে গেলাম আমিও । নতুন কবিতা সম্বন্ধে আমার ভাবনা ইত্যাদির
উত্তরগুলো পরের প্রশ্নের উত্তরের মধেই থাকলো । তবে এ নিয়ে খুব বেশি বলার যোগ্য লোক
নই আমি ।
৩) নতুন কবিতাও কি একদিন পুরনো হবে কালের নিয়মে? নাকি
সে থেকে যাবে চিরযৌবনা? কী মনে হয়ে আপনার?
৩) এসব অনেকবার বলা কথা তুষ্টি , তবু আরেকবার । নতুন কবিতা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া । চিরনতুন বলে কিছু
হয় না । পরবর্তী
এবং তৎপরবর্তী নতুন এসে আজকের নতুনকে পুরনো করে দেবে এই স্বপ্ন মাথায় নিয়েই ' নতুন কবিতা ' চর্চাধারার
শুরুয়াত হয়েছিল । কোনও ম্যানিফেস্টো ছিল না , আজও নেই । তবে কাঁথায় হিসি না ক'রে সোফায় হিসি করলে নতুন করা হ'ল , এ আমরা কখনো বিশ্বাস করি নি ।ফলে , পুরনো
যা কিছুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে জেনে , আত্তীকরন ক'রে তারপর তার সমস্ত অনুসঙ্গকে নির্মোহ ভাবে ত্যাগ ক'রে
একদম অজানায় অভিযানের পা ফেলাই ছিল লক্ষ্য । তবে , কে কতোটা পেরেছি তা অন্য আলোচ্য । এবং একদম জানি যে , শতবার বলা হলেও এই কথাগুলোই আবার অন্য কাউকে
বলতে হবে । যেমন ধরো , আমাদের ভাষার যে কোন উচ্চারনের মধ্যে একটা বিষয় থাকে । কিন্তু তাকেই অবলম্বন
ক'রে , তা নিয়েই
নানান বক্তব্য ফেঁদে এবং শেষে তারই সংক্রান্ত কোন একটি আপ্তবাক্য , নীতিকথা বা চমকদার বাক্যবন্ধ দিয়ে শেষ করা যে একরৈখিক কবিতা তার বিপরীত পথ
ছিল কবিতা শুরুর উচ্চারনে যে বিষয়টি রয়েছে , কবিতার সংগঠনে তাকে
ক্রমশ অপ্রধান করতে থাকা , সম্ভাবনাগুলিকে উজ্জ্বল করতে করতে
বিষয়টিকে ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলা। এই-ই অনুভবপ্রেরন ও কবিতার মুক্তি । এই-ই বিষয়ের হীনিকরন । এই-ই বিষয়হীনতা । বহুবার বলা, তবু আজও এই নিয়ে একই প্রশ্ন সমালোচনা ফুৎকার এবং
ধিক্কারও , বলাবাহুল্য কভু কভু একই উত্তরও , চলছে । নাহ , ব্যাপারটি
আমরা উপভোগও করতে চাই । তুষ্টি , কবিতার যৌবন তো অবিরত নতুন নতুনতর চিন্তাভাবনা ও তার স্ফুরনের মধ্যে দিয়ে সম্ভাব্য
সম্ভাবিত হয় । সেই দিকেই চেয়ে থাকা । চির শব্দটির মধ্যে যে আবেগ আছে তার প্রয়োগ সংযত
হ'লে তা কবিতার । না হ'লে , ওই , ঠিকই আছে । আমাদের কথা বলি
, কবিতার নতুন পৃথিবী গড়ার কাজে যার যার মেধা ,কল্পনাশক্তি ও প্রয়োগের সাধ্য অনুযায়ী এমনকি জোগালির কাজ করতে পেরেও আমাদের
প্রাণ ভরে গেছে । এই পথ । এই আনন্দ । পথের ধূলায় খেলাধুলা
ক'রে একদিন পথের ধূলাতেই হারিয়ে যাবো
, কোন আক্ষেপ নেই ।
৪) সুবর্ণরেখা হাইওয়ে ধরে কতটা এগোলেন আজ অবধি? চলার
পথে ক্লান্তি আসে নি তো? আজও কি সেই যৌবন আপনার ভেতরে দাপিয়ে বেড়ায়?
৪) রানওয়ে একটা কনসেপ্ট তুষ্টি । এবং তা গোল্ডলাইন্ড
। তো একটা স্বপ্নই
। উৎসের জলধারাটিকেও
ভুলছি না ও তার নিজস্ব রানওয়ে এবং পার্শ্ববর্তী জীবনপ্রণালী । শুরু বা শেষ তো সরকারি
হিসেব মাত্র । ফলে এগোতে থাকা বা থেমে যাওয়া এর বাইরে তো কিছু নেই । এগোচ্ছি না থেমে
গেছি , এ বিচারের ভার আমি তোমাদের মত
পাঠকদের মূল্যবান চোখ আর মাথার হাতেই ছেড়ে দিতে চাই ।
" সেই যৌবন " -কে যে কোথায় ফেলে এলাম
, আজও আমার যৎসামান্য কবিতাগুলোর মধ্যে তা-ই খুঁজে
বেড়াই । আর চেতনার যৌবন বা বীতযৌবন ও তার নড়াচড়া স্থবিরতা , তার থাকা না-থাকা
, এ-ও আমি তোমাদের দেখা দিয়েই দেখতে চাই ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete'কাঁথায় হিসি না করে সোফায় হিসি করলে নতুন করা হ'ল, এ আমরা কখনো বিশ্বাস করিনি'-- আমাকে এর আগে কেউ এত সহজে 'নতুন কবিতা'র গূঢ়তা বোঝাতে পারে নি। বারীন ঘোষালও না। তুমিও পারোনি বছর দুয়েক আগে আমার বাড়িতে ভিডিওতে তোমার একঘন্টার রেকর্ডিং-এ।
ReplyDeleteরঞ্জন, তুমি যুগ যুগ জিয়ো, জী!.
আর তুষ্টি, বাংলা পত্রিকায় এত বানান ভুল? প্রবাস বা বহির্বঙ্গেও বাংলার এমন দুর্দশা না।
'কাঁথায় হিসি না করে সোফায় হিসি করলে নতুন করা হ'ল, এ আমরা কখনো বিশ্বাস করিনি'-- আমাকে এর আগে কেউ এত সহজে 'নতুন কবিতা'র গূঢ়তা বোঝাতে পারে নি। বারীন ঘোষালও না। তুমিও পারোনি বছর দুয়েক আগে আমার বাড়িতে ভিডিওতে তোমার একঘন্টার রেকর্ডিং-এ।
ReplyDeleteরঞ্জন, তুমি যুগ যুগ জিয়ো, জী!.
আর তুষ্টি, বাংলা পত্রিকায় এত বানান ভুল? প্রবাস বা বহির্বঙ্গেও বাংলার এমন দুর্দশা না।